ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা
বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট এই বিশ্বকাপে তিনটি উদ্বোধনী জুটি দিয়ে চেষ্টা করে দেখেছে।
নাইম শেখের ৬২ ও ৬৪ রানের ইনিংস আছে, কিন্তু সফল হয়নি জুটি হিসেবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটির রান :
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে- লিটন/সৌম্য- ৮ রান
ওমানের বিপক্ষে- নাঈম/লিটন- ১১ রান
পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে- নাঈম/লিটন- ০ রান
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে- নাঈম/লিটন- ৪০ রান
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে- লিটন/নাঈম- ১৪ রান
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে- নাঈম/সাকিব- ২১ রান
বাংলাদেশের ক্রিকেটার নাসুম আহমেদও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যর্থতা নিয়ে একটা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট তুলে ধরেন।
‘প্রথম ছয় ওভার আমরা রান তুলতে পারছি না। এজন্য আমরা ব্যাকফুটে চলে যাচ্ছি। রানও হচ্ছে না, উইকেটও চলে যাচ্ছে। এটা নিয়ে কথা হয়। সবার ভেতরই চেষ্টা আছে ভালো কিছু করার। হচ্ছে না আসলে।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেখানে প্রথম ছয় ওভারে ৪০-৫০ রান তুলে নেয়ার একটা টার্গেট থাকে, যাতে ২০ ওভার শেষে ১৬০-১৮০ রান তোলার একটা ভিত্তি তৈরি হয়।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে প্রথম ছয় ওভারেই উইকেট হারিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ শুরু করে দিতে হয়।
মুশফিকুর রহিমের রিভাস সুইপ ও স্কুপ
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট তথা আধুনিক ক্রিকেটে উইকেটের চারিদিকে ফাঁকা জায়গা কাজে লাগাতে নিত্যনতুন শটের আবিষ্কার হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্কুপ শট খেলার জন্য বিখ্যাত ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল।
কিন্তু মুশফিকুর রহিম নিয়মিতই এই শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে যাচ্ছেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের যখন ৩৯ বলে ৫৩ রান প্রয়োজন তখন তিনি স্কুপ খেলতে গিয়ে রবি রামপালের বলে বোল্ড হয়ে যান।
অথচ তখন ওভারপ্রতি একটি বাউন্ডারি ও এক-দুই রান করে দৌড়ে নিলেই বাংলাদেশ জয়ের পথে থাকতো।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ৩ রানে ম্যাচটি হেরে যায়।
এর আগে মুশফিকুর রহিম ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লিয়াম লিভিংস্টোনের লেগস্ট্যাম্পে নির্বিষ ডেলিভারি রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ আউট হয়ে যান।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যখন বাংলাদেশের ৪২ বলে ৬৭ রান প্রয়োজন, তখন মুশফিকুর রহিম স্কুপ খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পের লাইন থেকে সরে এসে বোল্ড আউট হয়ে যান।
মোস্তাফিজুর ও সাইফুদ্দিনের খরুচে ধারহীন বোলিং
বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচে, ১৯ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ১২৩।
এই অবস্থায় মোস্তাফিজুর রহমান একই ওভারে লেগসাইডে পায়ের কাছে বল দিয়ে তিনটি ছক্কা হজম করেন।
১২৩ থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৪২ রানে ইনিংস শেষ করে।
মোস্তাফিজের সাথে সাইফুদ্দিন, একইভাবে এক ওভারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২২ রান হজম করেন।
সেখানে ৩০ বলে ৪৬ রান প্রয়োজন ছিল শ্রীলঙ্কার।
২২ রানের সেই ওভারের পর শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন হয় ২৪ বলে ২৪ রান। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট বিচারে যেটা খুবই সহজ।
৯টি ক্যাচ মিস
মোস্তাফিজ ও সাইফুদ্দিন রান দিয়েছেন এটা সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের ফিল্ডাররা যদি সঠিক সময়ে সহজ ক্যাচগুলো ধরতে পারতেন তাহলে প্রতিপক্ষ দলগুলো এই সুযোগই পেত না।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে লিটন দাস দুটি ক্যাচ মিস করেন। ১৪ রানের মাথায় ভানুকা রাজাপাকসে এবং ৬৩ রানের মাথায় চারিথ আসালঙ্কা।
এই দুজন ব্যাটসম্যান ৭৯ রানে ৪ উইকেট থেকে শ্রীলঙ্কাকে জয় এনে দেন, ৮৬ রানের জুটি গড়েন।
সাকিব আল হাসান, মাহমুউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস, শেখ মেহেদি, আফিফ সবাই ক্যাচ মিস করেন টুর্নামেন্টজুড়ে।
এসব ক্যাচ ধরলেই ম্যাচের পরিস্থিতি অন্যরকম দাঁড়াতো।
মোস্তাফিজুর রহমানের এক ওভারে দুটি ছক্কা হাঁকান ওয়েস্ট ইন্ডিজের জেসন হোল্ডার।
ঠিক তার আগের ওভারেই শরিফুলের বলে হোল্ডার অফসাইডে ক্যাচ তুলে দেন, সহজ হাতের ক্যাচ মিস করেন আফিফ হোসেন।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই বাংলাদেশের ফিল্ডাররা তিনটি ক্যাচ মিস করে।
বাংলাদেশের বোলিং কোচ ওটিস গিবসন প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন ক্যাচ মিস ‘চিন্তার বিষয়’ না।
তিনি বলেছেন, ‘ব্যাটিং বোলিংয়ের সাথে ক্যাচও অনুশীলন করা হয়। সব ম্যাচেই সবাই একটি বা দুটি ক্যাচ ফেলে দেয় এতে আমি চিন্তার কিছু দেখি না।’
বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের ইতিহাস বেশ পুরনো। চলতি বছর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ১২টি ক্যাচ ফেলে দেয় বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ ধরেছেন।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তারাই এই বছর পাঁচটি করে ক্যাচ মিস করেছেন।
‘ক্যাচ মিস তো ম্যাচ মিস’- এটি ক্রিকেটের পুরনো বাগধারা।
কিন্তু বাংলাদেশ এখন গোটা টুর্নামেন্টই হাত থেকে ফেলে দিচ্ছে।
সর্বশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তিনটি ম্যাচে জয় দিয়ে সেমিফাইনালের পথেই ছিল, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের, ভারতের বিপক্ষে রোহিত শর্মার এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে বাবর আজমের ক্যাচ ফেলে দেয় বাংলাদেশের ফিল্ডাররা।
১২ রানের মাথায় সাব্বির রহমান ওয়ার্নারের ক্যাচ ফেলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার করেন ১৬৬ রান।
ভারতের বিপক্ষে ৯ রানের মাথায় রোহিত শর্মার সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তামিম ইকবাল, রোহিত শর্মা সেই ম্যাচে করেন ১০৪ রান।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মোসাদ্দেক সৈকত মিস করেন বাবর আজমের ক্যাচ। যিনি ৫৭ রানে জীবন পেয়ে ৯৬ রান তোলেন।
এই ম্যাচগুলোতে হেরে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আর উঠতে পারেনি।
আর এবারের বিশ্বকাপে তো মূলপর্বে এখনো ম্যাচই জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
সূত্র : বিবিসি
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন