ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) মানেই বিতর্ক আর অসংলগ্নতার ছড়াছড়ি। বিতর্ক যেন বিপিএলের আরেক নাম। করোনার কারণে এক বছর বিরতি দিয়ে আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা বিপিএল। এই লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠিত হবে প্লেয়ার ড্রাফট। কিন্তু শুরুর আগেই প্রতিটি জায়গাতেই অগোছালো আর অব্যবস্থাপনার ছাপ। প্রতিটি আসরেই বিপিএল দেখা মেলে এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা।
আর কয়েক ঘণ্টা পরই ঢাকার পাঁচ তারকা একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে প্লেয়ার ড্রাফট। রাত সাড়ে ১১ বেজে গেলেও এখন পর্যন্ত দলগুলোর নামই চূড়ান্ত করতে পারেনি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। একটি জেলা ও পাঁচটি বিভাগের ফ্র্যাঞ্চাইজি ছয়টি কোম্পানির কাছে বিক্রয় করেছিল বিসিবি। গত বৃহস্পতিবার ছিল বিপিএলে পার্টিসিপেশন মানি জমা দেওয়ার শেষ সময়।
অন্য পাঁচ ফ্র্যাঞ্চাইজি টাকা জমা দিলেও ঢাকা ফ্র্যাঞ্চাইজি কেনা রূপা ফ্যাব্রিকস ও মার্ন স্টিল লিমিটেডের প্রতিনিধিরা নির্ধারিত সময়ে পার্টিসিপেশন মানি জমা দিতে পারেননি। ফলে তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। কিন্তু তাদের বদলে ঢাকার ফ্র্যাঞ্চাইজি কে সামলাবে সে ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কিছুই জানায়নি বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অথচ রাত পোহালেই দলগুলো প্লেয়ার ড্রাফটে অংশ নেবে।
যদিও রাত সাড়ে দশটার কিছু আগে বিসিবি দুটো লোগো পাঠায়। একটি টুর্নামেন্টের লোগো। অন্যটি ঢাকার লোগো। ঢাকার লোগোতে ফ্র্যাঞ্চাইজির নাম দেখা যায়নি। বোঝাই যাচ্ছে বিসিবি নিজেই ঢাকার দলটি পরিচালনা করবে। একইসঙ্গে প্লেয়ার ড্রাফট কিভাবে পরিচালনা করবে, সেইসব নিয়ম পাঠিয়েছে বিসিবি।
শুধু তাই নয়, সাধারণ প্লেয়ার ড্রাফটের আগের দিনে বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল ড্রাফটে অংশ নেওয়া দেশি ও বিদেশি ক্রিকেটারদের তালিকা প্রকাশ করে। কিন্তু রাত সাড়ে ১১টার পরও বিসিবি থেকে কোনও তালিকা সরবরাহ করা হয়নি। এছাড়া দলগুলো ড্রাফটের আগে একজন দেশি ও তিনজন বিদেশি ক্রিকেটারকে সরাসরি সাইন করিয়ে নিতে পারবে। কিন্তু রাত ১১টা পর্যন্ত বিসিবি আনুষ্ঠানিকভাবে এসবের কিছুই জানায়নি।
অথচ রবিবার সকালে বিসিবির প্রধান নির্বাহী বলেছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি নামগুলো বলতে পারছি না। কারণ এখনও সময় রয়েছে। আজকের মধ্যে আমাদের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কাদের রিটেইন করেছে এবং কারা ড্রাফটে থাকবে এই বিষয়ে একটি ক্লিয়ার পিকচার পাবো।’
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে একাধিক কর্মকর্তার নাম্বারে ফোন করা হয়েছিল। কেউই ফোন রিসিভ করেননি।
২০১২ সালে বিপিএলের যাত্রা শুরু হলেও এখনও ফ্র্যাঞ্চাইজি এই লিগটির কোনও কাঠামো দাঁড়ায়নি। প্রতি বছরই কোনও না কোনও বদল আসেই। নেই কোনও নিয়ম-নীতি। সবকিছুই হয় অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে। রেভিনিউ শেয়ারিং সিস্টেম তো অনেক দূরের কথা, আর্থিক ভিত্তি গড়ার কোনও সিস্টেম এখনও তৈরি করতে পারেনি বিসিবি। বাংলাদেশের বাইরে সবগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে কাড়ি কাড়ি টাকা থাকলেও বিপিএল কেবল পেছনের দিকেই হাঁটছে।
২০১২ সালে বিপিএল মাঠে গড়ানোর পর ব্যাপক আলোড়ন হয়েছিল। দলের নিলাম, খেলোয়াড় নিলাম থেকে শুরু করে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাক লাগিয়ে দেয় বিসিবি ও বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিপিএল যেন বর্ণহীন হয়ে পড়ে। ২০১২ সালের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন দলকে ২ কোটি টাকা প্রাইজমানি দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়কে দেওয়া হয় একটি গাড়ি।
বিপিএলের প্রথম দুই আসরে এমন চিত্র দেখা গেলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রাইজমানিও কমেছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দুই কোটি টাকা প্রাইজমানি পেয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটস। ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে রাজশাহী চ্যাম্পিয়ন হলেও কোনও প্রাইজমানি পায়নি। এবারের আসরের ১ কোটি টাকা চ্যাম্পিয়ন দলকে এবং ৫০ লাখ টাকা রানারআপকে দেওয়ার ঘোষণা করেছে বিসিবি। এতেই বোঝা যায়, বিপিএলের মান কতটা নিচের দিকে নামছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন